বর্ষাকালের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। একদিকে বৃষ্টির মনোমুগ্ধকর আবহাওয়া, অন্যদিকে বাড়ছে শিশুদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এই সময়ে ঠান্ডা-জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে শিশুদের মধ্যে। এ অবস্থায় শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাড়তি যত্ন ও সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষাকালে শিশুর শরীর, খাবার, পোশাক এবং ঘরের পরিবেশ—সবকিছুর প্রতি রাখতে হবে বাড়তি নজর।
🔹 শিশুকে ভেজা রাখা যাবে না
বর্ষায় জমে থাকা পানি বা বৃষ্টির পানি দিয়ে হাঁটাচলা একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ত্বকে ইনফেকশন এবং হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাইরে থেকে এসে শিশুর শরীর মুছে দিতে হবে শুকনো তোয়ালে দিয়ে, পরাতে হবে শুকনো পোশাক।
🔹 আরামদায়ক ও সুতির পোশাক দিন
এই সময় শিশুকে ঢিলেঢালা ও হালকা সুতির কাপড় পরানো ভালো। আবহাওয়ার তারতম্য বুঝে ফুলহাতা ও ফুলপ্যান্ট দিতে হবে, যেন ঠান্ডা না লাগে।
🔹 পায়ের যত্নে সতর্কতা জরুরি
ভেজা জুতা বা মোজা পরে থাকলে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ হতে পারে। বাইরে থেকে ফিরে শিশুর পা ধুয়ে মুছে দিতে হবে এবং শুকনো জুতা-মোজা পরাতে হবে। প্রয়োজনে অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
🔹 খাবারে থাকতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতা
পচা-বাসি খাবার একেবারে নিষিদ্ধ। শিশুকে ঘরে তৈরি গরম খাবার দিন। কাঁচা ফল বা সালাদ অবশ্যই পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে দিন। সবসময় ফুটানো পানি খাওয়ানো উচিত।
🔹 মশা থেকে সুরক্ষা অপরিহার্য
বৃষ্টির পানি জমে মশার প্রজনন বাড়ে, ফলে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের আশঙ্কা থাকে। তাই মশারি ব্যবহার, শিশুদের জন্য নিরাপদ মশা নিরোধক লোশন এবং সন্ধ্যায় দরজা-জানালা বন্ধ রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
🔹 ত্বকের যত্নে বাড়তি মনোযোগ
বর্ষায় শিশুর ত্বকে র্যাশ, ফুসকুড়ি বা ঘা দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন শিশুকে গোসল করানো, পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে শুকনো করা এবং প্রয়োজন মতো বেবি পাউডার বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
🔹 ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার ও বাতাস চলাচলের উপযোগী রাখতে হবে
ঘর যেন স্যাঁতসেঁতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। দিনে অন্তত কিছুক্ষণ জানালা খুলে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। ধুলাবালির পরিমাণ কমাতে কার্পেট ও মোজা কম ব্যবহার করা উচিত।
🔹 অসুস্থ হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন
ঘরোয়া টোটকার পরিবর্তে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ফ্লু, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস‑এসহ মৌসুমভিত্তিক ভ্যাকসিন সময়মতো দিয়ে দিতে হবে।
🔹 মাঝে মাঝে ডায়াপার ছাড়া রাখুন
দীর্ঘক্ষণ ডায়াপার পরে থাকলে চামড়ার সমস্যা হতে পারে। তাই শিশুকে দিনে কিছুটা সময় ‘ডায়াপার ফ্রি’ রাখা ভালো।
বর্ষার সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই সময় রোগ-জীবাণুরও বিস্তার ঘটে। তাই শিশুদের সুস্থ রাখতে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। সচেতন হলে শিশুর সুস্থতা রক্ষা যেমন সম্ভব, তেমনি পরিবারও কাটাতে পারে এক আনন্দঘন বর্ষা ঋতু।
আরও স্বাস্থ্য সংবাদ ও সচেতনতামূলক তথ্য পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।